উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্হা
ও মুসলিম সাংস্কৃতিক জীবন।
বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তান মিলে এত বিশাল এলাকা যে একে উপমহাদেশ বলা হয় এ এলাকার ৭০০ বছর মুসলিম শাসন ছিল বাংলাদেশে এলাকার এই শাসন ৫০০ বছর ছিল। ঐ সময় যে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার ফলে সকল শিক্ষিত লোকে ইসলামী শিক্ষালভের সুযোগ পেত। ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা বাংলাদেশ দখল করার পর ঐ শিক্ষাব্যবস্থা উৎখাত করে তাদের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে; যাতে মানুষের মন- মগজে তাদের অনুরুপ লোক তৈরি হয়।
১৯০ বছর আমরা ইংরেজদের গোলাম ছিলাম। ১৯৪৭ সালে আমরা ইংরেজ থেকে স্বাধীন হয়েছি। তখন থেকে এ দেশে মুসলিম শাসনই চলে আসছে। কিন্তু ইংরেজরা তাদের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যে ধরনের মন-মগজ ও চরিত্রের লোক তৈরি করেছে, সে ধরনের লোকেরাই দেশ শাসন করছেন। তারা নামে মুসলিম হলেও ইসলামী শিক্ষায় তাদের জীবন গড়ে ওঠেনি। ১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ হলাম। কিন্তুু ইংরেজরা চলে গেলেও তাদের শিক্ষাব্যবস্হই চালু থাকলো। ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েম হলেও ইসলামী সরকার কায়েম হয়নি।
১৯৭১ সালে এ দেশ পশ্চিম- পাকিস্তান থেকে আলাদা হলো। যাদের হাতে বাংলাদেশ শাসন করার ক্ষমতা এলো তারা শিক্ষা ব্যবস্হায় নিচের দিকে সামান্য
যেটুকু ইসলামী শিক্ষাব্যবস্হা ছিল ধর্মনিরপক্ষ দোহায় দিয়ে তাও উঠিয়ে দিলেন। বর্তমানে শুধু মাদ্রাসায় ইসলামের ধর্মীয় শিক্ষাটুকু আছে। স্কুল- কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার সামান্য কিছু থাকলেও মূলত ইংরেজ আমলের শিক্ষাব্যবস্থাই এখনও চালু আছে।
এ অবস্হায় দেশের শিক্ষিত লোকদের মন-মগজ- চরিত্র ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী তৈরি হতে পারছে না। যেহেতু ইংরেজ এখন নাই এর জন্য তাদের আর দায়ী করা যাচ্ছে না। পরবর্তি যারা দেশ শাষন করছে এর জন্য তারাই দায়ী। তাই শিক্ষিত সংখ্যা বাড়লেও মুসলিম শিক্ষিতদের অনেকের চালচলনের ধরন দেখতে অনেকটা অমুসলিমদের মতোই মনে হয়।
অবশ্যই শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামী না হওয়া সত্ত্বেও অনেক শিক্ষিত লোককে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কিংবা পারিবারিক প্রভাবে মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করতে দেখা যায়।
মুসলিম সংস্কৃতিক জীবন:
সকল ধর্ম ও সকল দেশের মানুষই নিজদের ধর্মীয় কাজগুলো নিজ নিজ নিয়মে করে থাকে ঐ নিয়মগুলোই হলো সংস্কৃতি। বাংলা কুষ্টি শব্দটিও এ অর্থেই ব্যবহার করা হয়। ইংরেজিতে Culture সেই হিসেবে মুসলিম কালচার, হিন্দু কালচার, খ্রিস্টান কালচার ইত্যাদি বলা হয়। দেশ হিসেবেই আমেরিকান কালচার, চাইনিজ কালচার ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর দ্ধারা বোঝা গেল, একজাতি থেকে অন্য জাতির মধ্যে জীবনযাপনের নিয়মে যে তফাৎ আছে ঐ তফাৎটাই সংস্কৃতি বা কালচার।
যারা আল্লাহকে একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু, রাসুল (সাঃ) কে একমাত্র আদর্শ নেতা, আখেরাতের জীবনে সাফল্য- লাভকেই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বলে বিশ্বাস করে, দুনিয়ার সব কাজ কর্ম তারা আল্লাহ ও রাসূলের শেখানো নিয়মেই করে থাকে। এ সব বিশ্বাসই সংস্কৃতির মূল। যারা এ সব বিশ্বাস করে না তারা যে রকম বিশ্বাস করে তাদের কাজের নিয়ম ঐ সব রকম হওয়ারই কথা। ইসলামী সংস্কৃতি বা সভ্যতার মূলভিত্তি হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। এই তিনটি মূলের ভিত্তিতে যাদের জীবন গড়ে ওঠে তারাই মসলিম জাতি। এ সভ্যতার ভিত্তিতেই ইসলামী সংস্কৃতির জন্ম হয়।
সুতারাং শিক্ষা ব্যবস্হা ও সংস্কৃতির সাথে মুসলিমদের পরকালের সাফল্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাত-জাহান্নামে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন:
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْهِمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللّٰهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَؕ وَ مَنْ یَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللّٰهَ هُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ۠
এসব লোকের কর্মপদ্ধতিতে তোমাদের জন্য এবং আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রত্যাশী লোকদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। এ থেকে যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও প্রশংসিত।
(আল-মুমতাহিনাহ ৬)
هُوَ الَّذِیْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَ دِیْنِ الْحَقِّ لِیُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّیْنِ كُلِّهٖؕ وَ كَفٰى بِاللّٰهِ شَهِیْدًاؕ
আল্লাহই তো সে মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে সমস্ত দ্বীনের ওপর বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষই যথেষ্ট। (আল-ফাতাহ্ ২৮)
تِلْكَ عُقْبَى الَّذِیْنَ اتَّقَوْا ط وَّ عُقْبَى الْكٰفِرِیْنَ النَّارُ
- অন্যদিকে সত্য অমান্যকারীদের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন। ( আর-রাদ:৩৫)
