রাসূলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারকারী এক মুরতাদের শাস্তি
হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, মদীনায় বিশর নামক একজন মুনাফিক বাস করতো। একবার জনৈক ইহুদীর সাথে তার বিবাদ বেধে যায়। ইহুদী বললোঃ চল, আমরা মুহাম্মদ(সা) এর কাছে গিয়ে এর মীমাংসা করে আসি। বিশর প্রথমে এ প্রস্তাবে রাজী হলো না। সে ইহুদী নেতা কা’ব ইবনে আশরাফের কাছে মীমাংসার জন্য যাওয়ার প্রস্তাব করলো।কা’ব ইবনে আশরাফ ছিল মুসলমানদের কট্টর দুশমন। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এই ইহুদী নেতার কাছ থেকে মীমাংসা কামনা করেছিল মুসলমান পরিচয় দানকারী বিশর। অথচ ইহুদী লোকটি স্বয়ং রাসূল এর উপর এর বিচারের ভার অর্পণ করতে চাইছিল। আসলে এর কারণ ছিল এই যে, রাসূল(সা) এর বিচার যে পুরোপুরি ন্যায়সংগত হবে তা উভয়ে জানতো। কিন্তু ন্যায়সংগত মীমাংসা হলে মুনাফিক হেরে যেত আর ইহুদী জয়লাভ করত। অনেক তর্ক বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত ইহুদীর মতই স্থির হল।
উভয়ে রাসূল(সা) এর কাছে গিয়ে বিবাদটার মীমাংসার ভার তাঁর ওপর অর্পণ করলো। রাসূল(সা) মামলার ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে ইহুদীর পক্ষে রায় দিলেন এবং বিশর হেরে গেল। সে এ মীমাংসায় অসন্তুষ্ট হয়ে ইহুদীকে এই মর্মে সম্মত করে যে, বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য তারা হযরত উমারের নিকট যাবে। বিশর ভেবেছিল যে, হযরত উমার যেহেতু কাফেরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিন, তাই তিনি ইহুদীর মোকাবিলায় তার পক্ষে রায় দেবেন।
দু’জনেই হযরত উমারের নিকট উপস্থিত হলো। ইহুদী তাঁকে পুরো ঘটনা জানালো এবং বললো, এ ব্যাপারে রাসূল(সা) যে ফায়সালা করেছেন, তা আমার পক্ষে। কিন্তু এ লোকটি তাতে সম্মত নয়। তাই আমাকে আপনার নিকট নিয়ে এসেছে।
হযরত উমার বিশরকে জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি এরূপ?
সে বললো, হাঁ। তখন হযরত উমার বললেন, তাহলে একটু অপেক্ষা কর।
এই বলে তিনি ঘরের ভেতর থেকে একখানা তলোয়ার নিয়ে এলেন এবং “যে লোক রাসূলের ফায়সালা মেনে নিতে রাজী হয় না, উমারের কাছে তার ফায়সালা হলো এই……” এই বলে চোখের নিমেষে বিশরকে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন।
এরপর বিশরের উত্তরাধিকারীরা রাসূল(সা) এর নিকট হযরত উমারের(রা) বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করলো যে, তিনি শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন। এ সময় রাসূল(সা) এর মুখ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কথা বেরিয়ে আসে যে, “উমার কোনো মুসলমানকে হত্যা করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে এটা আমি মনে করি না।”
আসলে হযরত উমার(রা) তাকে এই মনে করে হত্যা করেছেন যে, সে যেহেতু আল্লাহর রাসূলের ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে স্পষ্টতই মুরতাদ ও কাফের হয়ে গিয়েছে। ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের সর্বসম্মত শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড সেটাই তিনি তাকে দিয়েছেন। আর এর অব্যাহতি পর সূরা নিসার ৬০ থেকে ৬৮ নং আয়াত নাযিল হয়ে হযরত উমারের(রা) অভিমতকে সঠিক প্রমাণিত করে।
হাদিসের শিক্ষা:
(১)আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল(সা) এর আদেশ, নিষেধ বা সিদ্ধান্তকে যারা প্রকাশ্যভাবে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে মুসলমান বলে মনে করা বৈধ নয়।
(২) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকলে এ ধরনের লোকদের মৃত্যুদন্ড দেয়া অপরিহার্য। অন্যথায়, এ ধরনের মুরতাদদের সমাজচ্যূত করা ও নিন্দা প্রতিবাদের মাধ্যমে কোনঠাসা করে রাখতে হবে, যাতে আর কেউ মুরতাদ হবার ধৃষ্টতা না দেখায়।
